শহুরে জীবনে নিজের হাতে লাগানো তাজা সবজির স্বাদই আলাদা! জমি নেই বলে কি চাষ করার স্বপ্ন দেখবেন না? একদমই না। একটি মাঝারির টবই পারে আপনার ছাদ, বারান্দা বা করিডোরকে করে তুলতে উর্বর এক কৃষিজমি। আজ আমরা শিখবো কিভাবে সহজে টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়।
মিষ্টি কুমড়া শুধু স্বাদেই ভরপুর নয়, এটি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন-এ, সি, পটাশিয়াম ও ফাইবার। একটি গাছ থেকেই আপনি পেতে পারেন বেশ কয়েকটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর মিষ্টি কুমড়া। চলুন না delay, জেনে নেওয়া যাক সম্পূর্ণ পদ্ধতি।
কেন টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করবেন?
· স্থানের সদ্ব্যবহার: ছোট জায়গায়ও চাষ সম্ভব।
· নিয়ন্ত্রণে সুবিধা: রোগ-পোকা ও সারের উপর ভালো নিয়ন্ত্রণ থাকে।
· অর্গানিক চাষ: নিজের চোখের সামনে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করে নিরাপদ সবজি খাওয়া যায়।
· শোভাবর্ধন: মিষ্টি কুমড়ার লতাপাতা ও ফুল দিয়ে আপনার ছাদ বা বারান্দা হয়ে উঠবে দেখতে অসাধারণ।
---
টবে মিষ্টি কুমড়া চাষের ধাপগুলো:
১. উপযুক্ত টব ও মাটি প্রস্তুত:
· টবের: মিষ্টি কুমড়ার গাছের শিকড় মাটির গভীরে যায়। তাই কমপক্ষে ১৮-২০ ইঞ্চি গভীর এবং ১৫-১৬ ইঞ্চি চওড়া একটি টব নিন। মাটির টব, সিমেন্টের টব বা প্লাস্টিকের টব যেকোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারেন। টবের নিচে জল নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে।
· মিশ্রণ প্রস্তুত: উর্বর মাটি। নিম্নোক্ত উপাদানগুলো মিশিয়ে নিন:
· ৫০% সাধারণ মাটি (বাগানের মাটি)
· ৩০% জৈব সার (পচা গোবর/কম্পোস্ট)
· ২০% বালি (জল নিষ্কাশনের জন্য)
· এক চামচ নিম খোল (পোকামাকড় দমন করতে)
· এক মুঠো ভুসি/কাঠের ছাই (পটাশিয়ামের উৎস)
সবকিছু ভালোভাবে মিশিয়ে টবে ভরে ২-৩ দিন রোদে রাখুন।
২. বীজ বপন:
· বীজ: দেশি বা সংকর (হাইব্রিড) যে কোনো ভালো জাতের বীজ নিন। স্থানীয় নার্সারি বা কৃষি দপ্তর থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করুন।
· বপনের সময়: মিষ্টি কুমড়া মূলত শীত ও গ্রীষ্ম - দুই মৌসুমেই চাষ করা যায়। তবে ফাল্গুন থেকে বৈশাখ (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) এবং আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর)সময়।
· পদ্ধতি: টবের মাটি ভালো করে খুঁচিয়ে নিন। প্রতিটি টবে ৩-৪টি বীজ ১ ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিন। বীজ পোঁতার পর হালকা জল দিন। ৫-৭ দিনের মধ্যেই চারা গজাবে।
৩. চারা পাতলা ও সারের প্রয়োগ:
· চারা পাতলা: যখন চারা ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হবে, তখন সবচেয়ে strong ও স্বাস্থ্যবান ২টি চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলুন। বেশি গাছ রাখলে সবকটিই দুর্বল হবে।
· সার প্রয়োগ:
· প্রাথমিক পর্যায়: মাটি প্রস্তুত করার সময়ই পর্যাপ্ত জৈব সার দিয়ে নিবেন।
· পরবর্তী সার: গাছে ফুল আসা শুরু করলে, প্রতি টবে এক মুঠো করে vermicompost বা well decomposed গোবর সার দিতে পারেন। সপ্তাহে একবার পাতলা করে গোবরের slurry দিলে গাছের growth খুব ভালো হয়।
৪. জল দেওয়া:
মিষ্টি কুমড়ার গাছকে নিয়মিত জল দিতে হবে, কিন্তু বেশি জল দেওয়া যাবে না। শীতকালে ২-৩ দিন পরপর এবং গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন হালকা জল দিন। খেয়াল রাখবেন, যেন টবের মাটি ভেজা ভেজা থাকে কিন্তু কাদা না হয়। টবের নিচ দিয়ে যেন অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়।
৫. মাচা তৈরি:
মিষ্টি কুমড়া একটি লতা জাতীয় তাই এর লতাগুলো যেন ছড়িয়ে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায়, সেজন্য মাচা বা Trellis তৈরি করে দিতে হবে। বাঁশের কঞ্চি, দড়ি বা নেটের সাহায্যে ছাদ বা বারান্দার রেলিং এর সাথে সহজেই মাচা বানানো যায়। মাচা দেওয়ার advantages:
· ফল মাটিতে ছোঁয়া থেকে রক্ষা পায়, ফলে পচন রোধ হয়।
· গাছ adequate সূর্যের আলো ও বাতাস পায়।
· রোগবালাই কম হয়।
· জায়গা বাঁচে।
৬. পরাগায়ন:
ছাদে বা বারান্দায় প্রাকৃতিক পরাগায়নের জন্য পর্যাপ্ত মধু মাছি বা প্রজাপতি নাও থাকতে পারে। তাই হাতে করে পরাগায়ন করতে পারেন। সকাল বেলায় একটি পুরুষ ফুল তুলে এর পরাগটি (হলুদ) স্ত্রী ফুলের (যার নিচে একটি mini কুমড়ার মতো অংশ থাকে) মাঝখানে স্পর্শ করিয়ে দিন। এটি ফল ধারণের সম্ভাবনা অনেক倍 বাড়িয়ে দেবে।
৭. রোগ-পোকা দমন:
· জলদি রোগ: পাতায় সাদা সাদা দাগ দেখা দিলে নিম অয়েল স্প্রে করুন।
· লতা মড়ক: বেশি জল দেওয়ার কারণে হতে পারে। জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিক রাখুন।
· এফিড/সাদা মাছি: সাবানের পানি স্প্রে করে দূর করতে পারেন।
· লাল মাকড়সা: পাতার নিচের দিকে মরচে রঙের ছোট পোকা দেখা যায়। পানি দিয়ে পাতার নিচে স্প্রে করে দিলে কমে যায়।
সবসময় জৈব পদ্ধতিতে রোগ-পোকা দমন করার চেষ্টা করুন।
৮. ফসল তোলা:
বীজ বপনের ৭০-৯০ দিন পর মিষ্টি কুমড়া তোলার জন্য ready হয়। কুমড়ার skin উজ্জ্বল রং ধারণ করলে এবং নখ দিয়ে চাপ দিলে শক্ত মনে হলে বুঝবেন এটি তোলার সময় হয়েছে। একটি ধারালো ছুরি বা ব্লেড দিয়ে বোঁটাসহ কেটে ফল তুলে নিন।
---
কিছু বিশেষ টিপস:
· গাছের গোড়ার মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিন, যাতে প্রবেশ করতে পারে।
· খুব বেশি পাতা হলে কিছু পাতা দিন, যাতে গাছে adequate আলো-বাতাস প্রবেশ করে।
· একটি টবে সর্বোচ্চ ২টি গাছ রাখাই ভালো।
· ফল যখন একটু বড় হবে, তখন সেটি মাচায় রাখুন, যাতে বোঁটায় চাপ না পড়ে।
সবশেষে, টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ একটি আনন্দদায়ক ও লাভজনক experience। একটু যত্ন আর ভালোবাসা দিলেই প্রকৃতি আপনাকে দেবে স্বাদু ফল। আপনার ছাদেই শুরু করুন এই সবুজ চাষাবাদ, বাড়িতে ফিরে পান প্রকৃতির স্পর্শ।
শুভ কামনা রইল আপনার চাষাবাদের জন্য!

0 Comments